হেফাজত-চরমোনাইকে জড়িয়ে হিন্দু পরিষদের উস্কানিমূলক বক্তব্য।

গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর নিউমার্কেট মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মীদের হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, চরমোনাই, আলেম-উলামা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক শ্লোগানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সমাবেশ স্থলের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হিন্দু কর্মীরা বিজেপির দলীয় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে অত্যন্ত কুৎসিতভাবে হেফাজতে ইসলাম ও চরমোনাই পীর সম্পর্কে বলছেন, ‘হেফাজতের গালে গালে- জুতা মারো তালে তালে’, ‘চরমোনাইয়ের গালে গালে-জুতা মারো তালে তালে।’
এমনকি ধর্মীয় বিদ্বেষ ও উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য তারা হেফাজতে ইসলাম এবং চরমোনাই পীরের আস্তানায় আগুন লাগিয়ে দেয়ার স্লোগানও দেয়া হয়। তারা বলছেন, ‘একটা দুইটা দালাল ধর-ধইরা ধইরা জবাই কর।’ ‘হেফাজতের আস্তানা- জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’, ‘চরমোনাইয়ের আস্তানা – জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও।’
হিন্দু সাম্প্রদায়িক স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’ বলে তারা স্লোগান দিতে থাকেন ‘জ্বালো রে জ্বালো – আগুন জ্বালো। মৌলবাদের আস্তানা – জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও।’
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সরকারের প্রতি হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি সরকার দাবি না মানে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচি ঘোষণা করব। প্রয়োজনে লং মার্চের মতো কর্মসূচি দিব। পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাব।’
মধ্যরাতের নির্বাচনের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রীর প্রতিও অনাস্থা প্রকাশ করেন হিন্দুদের নেতা রানা দাশগুপ্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী-নেতাকে আমাদের আর বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কারণ তারা যা বলেন তা করেন না, যা করেন তা বলেন না। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় আপনি অনেকবার অনেক ভূমিকা রেখেছেন। উপর থেকে পানি ফেলেছেন কিন্তু সেই পানির নিচের দিকে দেখা আমরা পাইনি। কারণ আপনার দলের ভেতর দল আছে, আপনার প্রশাসনে পাকিস্তান আছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে ভারতের ঘনিষ্ঠ এই হিন্দুনেতা বলেন, ‘দুঃখের সাথে বলছি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি আমাদের ঘনিষ্ঠজন। আপনার কাছে বছরে চার থেকে ছয়বার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংকট নিয়ে কথা বলি।’
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার সরাসরি দাবি না করলেও, এর প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে সংগঠনের আরেক নেতা অধ্যাপক জিন বোধী ভিক্ষু বলেন, ‘আমরা ৭২ এর সংবিধানে ফিরতে চাই। আপনারা কী আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন না?’
অপরদিকে উস্কানীমূলক সন্ত্রাসী শ্লোগানের কড়া সমালোচনা করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজত মহাসচিব, হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদীস ও শিক্ষা পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
আজ (৮ নভেম্বর) রবিবার রাতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী বলেন,হেফাজতে ইসলাম দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক ঈমান-আকিদা ভিত্তিক সংগঠন। লক্ষ কোটি মুমিন মুসলমানের প্রাণের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। হেফাজতকে নিয়ে উস্কানিমূলক সন্ত্রাসী শ্লোগান দিয়ে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। হেফাজতকে নিয়ে কোন রাম বামদের উস্কানি আর আস্ফালন সহ্য করা হবে না।
হেফাজত মহাসচিব আরো বলেন, ক’দিন আগে শাহবাগে বাম সংগঠনসমূহের অনুষ্ঠিত একটি সমাবেশ শেষে ‘প্রগতিশীল গণসংগঠনসমূহ’ ব্যানারে উদীচী, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়নসহ কিছু সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি মশাল মিছিল শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’-এর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে বিদ্বেষ ও উস্কানীমূলক শ্লোগান দিয়েছিল। ওরা মূলত এসব উস্কানিমূলক শ্লোগানের মাধ্যমে দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে চায়। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে চায়। ওরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশবিরোধী আধিপত্যবাদি শক্তির হাতে আগ্রাসনের অজুহাত তুলে দিতে চায়। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের কর্তব্য, এসব উগ্রপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে যথাযথ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আল্লামা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম বৃহত্তর অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। ইসলাম, মুসলমান, দেশ ও জাতীর কল্যাণে সংগঠনটি শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করে যাচ্ছে। হেফাজতকে নিয়ে বাম রামদের আস্ফালনের আড়ালে ইসলাম ও দেশবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্র নিহীত বলে মনে করি। কোন আধিপত্যবাদি শক্তির হয়ে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র দেশবাসী সফল হতে দিবে না। অনতিবিলম্বে এদের আস্ফালন বন্ধ করা না হলে তৌহিদি জনতা ঈমান, ইসলাম ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাধীনতা রক্ষায় আবার রাজপথে নামবে।